টানা তিন মাস রপ্তানি আয় নিম্নমুখী, অক্টোবরে হ্রাস ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ
প্রকাশিত: ০৪/১১/২০২৫ ০১:২৫:৪৫ PM
ছবি: ।
দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ধীরগতি চললেও রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সে কিছুটা স্বস্তি ছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রথম চার মাসে তিন মাসেই রপ্তানি আয় কমেছে। সর্বশেষ অক্টোবরে রপ্তানি আয় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ হ্রাস পাওয়ায় অর্থনীতিতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে ৩৮২ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই মাসে ছিল ৪১৩ কোটি ৮ লাখ ডলার। ফলে রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর আগে সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছিল ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং আগস্টে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
তবে জুলাই মাসে রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। সেই প্রভাবেই অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষে সামগ্রিকভাবে রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ২২ শতাংশে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশজুড়ে অচলাবস্থার মধ্যেও রপ্তানিতে ভালো সাড়া মিলেছিল। কিন্তু আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকার পরও আয় হ্রাস পাওয়া উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রভাবে জুলাই-আগস্টে রপ্তানি কিছুটা চাপে ছিল। তবে অক্টোবরে এতটা কমে যাওয়া অ্যালার্মিং। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের সতর্ক হওয়া দরকার।’
দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক থেকে। টানা তিন মাস ধরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও অর্থবছরের শুরুটা ছিল বেশ ভালো। গত জুলাইয়ে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু আগস্টে রপ্তানি কমে প্রায় ৫ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে আরও ৫ শতাংশের বেশি হ্রাস পায়। অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৩০২ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ১ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাত এখন পর্যন্ত ইতিবাচক ধারায় আছে। জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪১ কোটি ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।
কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি কিছুটা কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এই খাতে রপ্তানি হয়েছে ৩৮ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২ শতাংশ কম। শুধু অক্টোবরে ১০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস।
তবে হোম টেক্সটাইল খাতে গত মাসে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা গেছে। অক্টোবরে ৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ। প্রথম চার মাসে এই খাতে মোট রপ্তানি হয়েছে ২৮ কোটি ডলার, যা গত বছরের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি।
এছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের রপ্তানি হয়েছে, যা ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। শুধু অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ।
সামগ্রিকভাবে টানা তিন মাস রপ্তানি আয় হ্রাস দেশের অর্থনীতি ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থার জন্য একটি সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।